Paromitar Koyekdin – Part 1

tomal majumder 2017-06-20 Comments

আর সব চেয়ে অন্ধকার টা ভিমের,নাম ভিম কুঠরি। বাইরেটা যদিও ইট দিয়ে বাঁধানো।আর বর্তমানে সুন্দর করে ফুলের উদ্যান করে সাজানো। কারো কারো মতে এটা মোটেই পান্ডবদের বানানো নয় বরং গুপ্ত যুগের নিদর্শন। সম্রাট অশোকের সময়ের। যাই হোক আমরা বেশ উপভোগ করলাম জায়গা টা। দু একবার পাশাপাশি দাঁড়ানো ছাড়া শ্রী কে একা পেলাম না, এতো সুন্দর জায়গাতে ও মনটা উদাস হয়ে রইলো সেজন্য।

রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়াই ক্যাম্পের নিয়ম। তবুও সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়ে ক্যাম্প ফায়ার জ্বেলে কিছুক্ষন গান বাজনা গল্প গুজব করা হলো।সদস্যদের ভিতর কয়েকজন খুব ভালো গান করে দেখলাম।আর একটা দক্ষিনী মেয়ে দারুন নাচলো।আমি অবশ্য পুরো সময়টাই পারমিতা কে দেখছিলাম। ক্যাম্প ফায়ার নিভিয়ে আমাদের শুয়ে পড়তে বলা হলো রাত ৯.৩০ নাগাদ।তার আগেই রাতের খাবার দেওয়া হয়ে গেছে।

পরদিন খুব সকালেই এখান থেকে ক্যাম্প গুটিয়ে ফেলা হলো। বলা হলো প্রথমে প্রিয়দর্শিনী পয়েন্ট দেখে যাবো সাতপুরা ন্যাশনাল পার্কে।তারপর পরবর্তী ক্যাম্প সাইটে গিয়ে রাত কাটাবো। প্রিয়দর্শিনী পয়েন্ট টা অপুর্ব! পয়েন্ট থেকে বিশাল অঞ্চল দেখা যায়। সবুজের যে এতো রকম হতে পারে ওখানে না গেলে বিশ্বাস করা যায় না। প্রায় ৬/৭ টা শেড দেখলাম সবুজের। রেলিং ঘেরা জায়গাটায় প্রকৃতির শোভা দেখার সময় আমার গা ঘেঁষে দাঁড়ালো শ্রী।

আমি মুখ নামিয়ে বললাম, থাকতে পারছি না শ্রী। অসমাপ্ত কাজ টা শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না। সবাই কে লুকিয়ে আমার হাতে একটা চিমটি কাটলো শ্রী।মুখে বললো, অতো খায় না, যাও পাজি! আমি বললাম, খেলাম ই তো না, তার আবার এতো অতো কি? সে বললো, খাবার সময় হলে খেয়ো, কে নিষেধ করেছে? এমন সময় তাড়া লাগালো কমান্ডার, যেতে হবে পরের ডেস্টিনেশন এ।

এগারোটা বাজার আগেই রওনা দিলাম সাতপুরা ন্যাশনাল পার্কের উদ্দেশ্যে। পৌঁছাতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো। প্রায় ১৪২৭ বর্গকিমি জুড়ে বিস্তৃত এই ন্যাশনাল পার্ক। তাওয়া নদীর অববাহিকায়। সাতটা পাহার চূড়া ঘেরা বলেই এর নাম সাতপুরা।আর রয়েছে নানা বন্য প্রানীর সমাহার। বর্তমানে এটা একটা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট ও বটে।

বাঘ দেখার সৌভাগ্য হলো না, কিন্তু চিতল হরিণ, সম্বর, বাইসন আরো কতো রকমের বন্য প্রানী দেখে মন জুড়িয়ে গেলো। বিকেল হতেই আমরা চলতে শুরু করলাম উল্টো দিকে। অনেক দূরে জঙ্গলের ভিতর হবে এবারের ক্যাম্প। প্রায় ঘন্টা খানেক গাড়ী চলে বা দিকে মোড় নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়লো গাড়ী। এর পর ও ঘন্টাখানেকের উপরে যেতে হলো। পাথুরে জঙ্গলের রাস্তার ঝাঁকুনি খেতে খেতে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়।

বোঝাই যাচ্ছে লোকালয় থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি আমরা। এমনিতেই সন্ধ্যা নেমে এসেছে, কিন্তু জঙ্গলের ভিতর মনে হচ্ছে অনেক রাত। মাঝে মাঝে গাছপালার ভিতর দিয়ে ম্লান আকাশ দেখা না গেলে ভাবতাম সত্যিই রাত হয়ে গেছে। একটা ফাঁকা জায়গা দেখে সেদিনের মতো ক্যাম্প করা হলো,কারন রাত নেমে এসেছে, আর চলা সম্ভব হচ্চে না। সবাই ভীষন ক্লান্ত। চটপট খিচুড়ি খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়া হলো।ক্লান্তি তে ঘুম আসতেও দেরী হলো না।

পরদিন সকালে কমান্ডার আমাদের নিয়ে জায়গাটা ঘুরে দেখালো।বিভিন্ন গাছ, পাহাড় বা টিলার বৈশিষ্ট্য, কিছু প্রানী আর কি কি বিপদ হতে পারে বিশদে বুঝিয়ে দিলো। একা একা ঘুরে বেড়ানো একেবারেই চলবে না, কারন জঙ্গলে প্রচুর চিতাবাঘ আছে বলে সাবধান করে দিলো। বুনো বাইসন ও কম ভয়ঙ্কর না, এটা বলতেও ভুললো না। এরপর সকালের জলখাবার খেয়ে আবার গাড়ী তে উঠলাম আমরা। ঘন্টা তিনেক বিরতিহীন চলে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছলাম।

যেখানে আমাদের ক্যাম্প করা হলো, এক কথায় জায়গা টা অপূর্ব! চারদিকে টিলা ঘেরা একটা ফাঁকা জায়গা। জায়গাটাকে চারপাশে পাঁচিলের মতো ঘিরে রয়েছে বড় বড় গাছ। পাশেই একটা ঝরনা। মনটা ভালো হয়ে গেলো এক নিমেষে। পথের ক্লান্তি ভুলে প্রকৃতির শোভা উপভোগ করতে লাগলো সবাই।এখানেই তিনদিন থাকবো আমরা। এবার ও সেই একই ভাবে তাবু টাঙানো হলো। সবাই আমরা পালা করে ঝরনা তে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। মেয়েদের জন্য ঝরনার পাশে একটা জায়গা ঘিরে বাথরুম বানানো হলো।

দেখতে দেখতে দুপুরের খাবার বানিয়ে ফেললো বাবুর্চি। খাওয়াটাও বেশ জম্পেশ হলো। ক্লান্তি আর ভাতঘুমে অবশ করে ফেললো প্রায় সবাইকে। শুধু অবশ হইনি আমি আর পারমিতা।এখানে পৌঁছানোর পর থেকেই সুযোগ খুঁজছিলাম একা হবার কারন দুদিন ধরে আগুন জ্বলছে দুটো শরীর ও মনে। খাওয়ার পরে সবাই যখন নিজেদের থালা বাসন ধুঁয়ে গুছিয়ে রাখতে ব্যস্ত, আমি ইশারায় পারমিতা কে জনালাম চলো কেটে পড়ি।

মুখে কিছু না বললে ও মুখের উজ্জ্বলতা বলে দিলো সেও অপেক্ষা করছে। সবার চোখের আড়ালে আলাদা হয়ে গেলাম দুজনে। একটু দূরে গাছের আড়ালে যেতেই জড়িয়ে ধরলাম তাকে। বুকের মধ্যে পিষতে শুরু করলাম পাগলের মতো। মুখে ঘাড়ে গলায় চুমুর পর চুমু দিয়ে চলেছি। ছটফট করে উঠলো পারমিতা। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, এখানে না, অন্য কোথাও চলো।ইশারায় অল্প দূরের একটা টিলা দেখিয়ে দিলো।

টিলা টা গড়পড়তা টিলার তুলনায় বেশ উঁচু এবং খাঁড়া। উপরে ওঠার কোনো পাকদণ্ডী নেই দেখেই বোঝা যায়,এখানে মানুষের পা পড়েনা সচরাচর। নীচের দিকে জঙ্গল বেশ ঘন, যতো উপরে ওঠা যায় গাছপালা ক্রমশ পাতলা হয়ে গেছে।এবড়োখেবড়ো পাথরে পা রেখে উঠতে যদিও খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না।

অবশ্য আমাদের দুজনার তখন যা অবস্থা, অনায়াসে হিমালয় চড়ে যাবো দৌড়ে। টিলার মাথায় পৌঁছে বেশ অবাক হয়ে গেলাম দুজনে। উপরটা বেশ প্রশস্ত, আর সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা, উপরে একটা গুহা রয়েছে। মুখটা ঝোপঝাড় এ ঢেকে আছে প্রায় তাই চট করে বোঝা যায় না। প্রাকৃতিক গুহা কোনো এক সময় মানুষ বাসযোগ্য করে নিয়েছিলো, গুহামুখ টা দেখলেই বোঝা যায়।

প্রায় সমান করে কাটা। আমাদের ক্যাম্পের দিকে এসে একটা বড় পাথরের উপর থেকে ঝুঁকে তাকাতেই ক্যাম্পটা স্পষ্ট দেখা গেলো। অনেকের নড়াচড়া হাটাচলা দেখে চিনতে ও পারলাম তাদের। কিন্তু নীচ থেকে টিলার উপর টা আন্দাজ করা যায় না। জায়গাটা সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়ে আমরা গুহাটার দিকে এগিয়ে গেলাম। যাবার আগে একটা মোটা দেখে ডাল ভেঙে নিতে ভুললাম না, অব্যবহৃত গুহা, জন্তু জানোয়ার থাকা অসম্ভব নয়।

ঝোপঝাড় পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে অবাক হলাম আরো। অনেকটা চওড়া গুহা। গভীরতা আরো বেশী। পিছনদিক টা দেখাই যায়না প্রায়। তবুও একটু এগিয়ে অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে দেখে আর এগোতে সাহস করলাম না। কোনো প্রানীর বিষ্ঠা বা হাড়গোড় চোখে না পড়ায় নিশ্চিন্ত হলাম হিংস্র কোনো জন্তু এখানে আসেনা বুঝে।

Comments

Scroll To Top