Paromitar Koyekdin – Part 1

tomal majumder 2017-06-20 Comments

অপমানে লাল হয়ে গেলো যোগেন, আর আমি খুশিতে হলুদ-সবুজ।ঠিক হয়েছে ব্যাটা আহাম্মক, গায়ে পড়া ছাগল কোথাকার। ব্যাগ থেকে রাতের পোষাক নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো পারমিতা। অপমান টা যে আমি লক্ষ্য করেছি, সেটা খেয়াল করেছে যোগেন। বিশাল একটা আড়মোড়া ভেঙে বোকা বোকা মুখ করে বললো, বুঝলেন ভায়া, এযুগে কারো উপকার করতে নেই… যাই শুয়ে পড়ি। আপনি ঘুমাবেন না? আমি বললাম, ট্রেন যাত্রায় রাতে ঘুমাইনা আমি, আপনি শুয়ে পড়ুন। যোগেন একটা অসহায় শ্রাগ করে উঠে পড়লো মিডিল বার্থে।আমিও আমার সীটে আধশোয়া হয়ে বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

পারমিতা বাথরুম থেকে ফিরে এলো আরো হট হয়ে। একটা ডিভাইডার আর একটা স্লিভলেস টপ পরেছে। জাস্ট সোজাসুজি তাকানো যাচ্ছে না তার ভরা যৌবনের দিকে। যোগেনের অপমানের কথা মনে করে আমিও চুপচাপ রইলাম। নিজের বার্থ ঠিকঠাক করে নিয়ে নীচু হয়ে বসলো পারমিতা। না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম আমার দিকে তাকিয়ে আছে সে। আমি তাকাচ্ছি না দেখে বেশ জোরেই বললো, এতো মুশকিল হলো! দশদিন একটা বাচাল আর এক গোমড়ামুখো জ্যাঠামশাই এর সঙ্গে কাটাতে হবে নাকি?!!…

তার বলার ধরনে হেসে ফেলে তাকালাম আমি। সে মুখ বেঁকিয়ে মাথা ঘুরিয়ে নিলো অন্যদিকে। আমি বললাম, কথা না বলেও যদি শুধু কান পেতেই সব জানা হয়ে যায়, তাহলে শব্দ খরচ করার দরকার কি? পারমিতা বললো, আরে আপনি কথা বলতে জানেন তাহলে? আমি বললাম, এ কি? দশদিন আপনি আজ্ঞে করে কাটাতে হবে নাকি? দম বন্ধ হয়ে মরেই যাবো তাহলে..

এবার হেসে ফেললো পারমিতা। বললো, তাহলে তোমার নাম….. শেষ করতে না দিয়ে বললাম, ভালো নাম কিংশুক মজুমদার, আর বদনাম…. তমাল। গল্প করতে করতে রাত বেড়ে চললো।অন্য যাত্রীরা ঘুমিয়ে পড়েছে, ট্রেনের আওয়াজে গলা তুলে কথা বললে তাদের অসুবিধা হবে, তাই পারমিতা আমার বার্থে এসে বসলো, আমি একটু কাঁৎ হয়ে তাকে জায়গা করে দিলাম।বাকী যেটুকু অজানা ছিলো জানা হয়ে গেলো।বড়লোকের মেয়ে।জেদি, এবং স্বাধীনচেতা।

সেকেন্ড ইয়ারে সায়েন্স নিয়ে পড়ে। বাবা মা তাদের কাজ, ক্লাব, পার্টি নিয়ে ২৪ ঘন্টা ব্যস্ত, তাই তার জন্য সময় নেই। নিজেকে সুখি এবং খুশি করার ভার নিজের হাতে তুলে নিয়েছে পারমিতা। মেয়েটার শরীর টেনেছিলো আগেই, কথা বলে মনটা ও টেনে নিলো আমার। এক সময় ক্লান্ত হয়ে নিজের সীটে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো পারমিতা, আমি আধোঘুমে জেগে রইলাম সারারাত।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করার পরে আমি ও একটু ঘুমিয়ে নিলাম। পারমিতা আমাকে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে দিলো যখন, তখন সকাল ৭ টা বাজে। ট্রেন টা সাসারাম স্টেশনে দাঁড়ানো। যোগেন আগেই উঠে পরেছে। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলাম। মোঘলসরাই পৌঁছলাম ৮.৩০ নাগাদ।

জলখাবার খেয়ে নিলাম আমরা। তারপর তিনজন আমার সীটে বসে গল্প করতে লাগলাম। দুজনকেই জিজ্ঞাসা করলাম, অল ইন্ডিয়া ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন সম্পর্কে কিছু জানে কি না? দুজনেই বললো, বেশী কিছু জানে না। বিজ্ঞাপনে অসম্ভব কম টাকায় সাতপুরা ভ্রমনের সুযোগ দেখে এসেছে। আমি বললাম, ঠিক আছে, আমরা তিনজন ই যেহেতু একই রাজ্যের, তাই আমরা একে অন্যের খেয়াল রাখবো পুরো সময়টা।রাজি হয়ে গেলো ওরা।

রাত ১০-২০ তে ট্রেন পৌঁছালো পিপারিয়া স্টেশনে। এখানেই নামতে হবে আমাদের। নেমে নির্ধারিত নির্দেশ মতো টিকিট কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখি সংস্থার বোর্ড নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের নিয়ে একটা হোটেলে তুললো সে। সেখানে আরো ১৩ জন অন্য অন্য রাজ্য থেকে আগেই এসে উঠেছে। তাদের ভিতর মেয়ে ৪জন আর পুরুষ ৯ জন। বলা হলো কাল সকাল ৮ টায় গাড়ি আসবে।গাড়ি করে আমরা যাবো ক্যাম্প সাইটে। আমাদের আলাদা আলাদা তিনটে সিঙ্গল রুম দেওয়া হলো পাশাপাশি।

কাল রাতে ভালো ঘুম হয়নি, তাই শুয়ে পড়লাম একটু তাড়াতাড়ি ই। মাঝরাতে দরজায় নক হলো। বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দেখি, পারমিতা দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার? এতো রাতে? সে আমাকে ঠেলে আমার ঘরে ঢুকে বিছানার উপর বসলো। বললো, সরি কিংশুক, তোমাকে বিরক্ত করলাম। আমি বললাম, না না, ঠিক আছে, কোনো প্রব্লেম? সে বললো, না ঠিক প্রব্লেম না, তবে অস্বস্তি হচ্ছে একটা। জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে খুলে বলো।

পারমিতা বললো, সব কিছু কেমন অদ্ভুত ঠেকছে না তোমার কাছে? আমি যতোদূর জানি, এখান থেকে ক্যাম্প সাইট মাত্র ৪০ কিমি দূরে। আমরা তো ১০-২০ তে নামলাম, তাহলে ক্যাম্পে চলে যেতে বড়জোর ১ ঘন্টা লাগতো। তাহলে হোটেলে তুললো কেন? আর তুললোই যদি, সিঙ্গেল রুম কেন? ৫ জন মেয়ে আছি আমরা, আমাদের দুটো ঘরে ভাগ করে রাখতে পারতো।

হোটেলটা ও সুবিধার মনে হচ্ছে না। সব সময় মনে হচ্ছে কেউ রুমের ভিতর আমার উপর নজর রাখছে। তোমাকে ঠিক বোঝাতে পারবো না, তবে মেয়েরা এগুলো ঠিক বুঝতে পারে। তার উপর জুটেছে যোগেন। একটু পর পর এসে নক করছে। ফ্রেস হয়েছি কি না… ট্রেন জার্নির পরে ভালো করে স্নান করেছি কি না… এসব প্রশ্ন করছে দাঁত বের করে।আমার একটুও ভালো ঠেকছে না তমাল।

আমি বললাম,তোমার পয়েন্টগুলো ফেলে দেবার মতো নয় পারমিতা, এগুলো আমার ও অদ্ভুত লেগেছে,কিন্তু হয়তো রাতে ক্যাম্প সাইটে যাওয়া টা সেফ নয় তাই হোটেলে তুলেছে।আর সিঙ্গেল রুম দেওয়াতে তো আমাদের খুশি হওয়া উচিৎ, তাইনা? বেশ ভালো ব্যবস্থাপনা। সে বললো, হুম, খুশি হতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু হতে পারছি না তমাল।এরকম দু এক টা ক্যাম্পে আমি আগে ও গেছি।এরকম হয় না ক্যাম্প, বড্ড বেশী জামাই আদর করছে এরা।

আর রুমের ভিতর যে অস্বস্তি টা হচ্ছে, সেটার ব্যাপারে কি বলবে তুমি? আমি বললাম, সেটা নতুন জায়গায় একা থাকার কারনে মনের ভুল হতে পারে,যাও চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে। পারমিতা বললো, না কিংশুক, মনের ভুল না,নতুন জায়গায় হোটেলে আমি আগেও একা থেকেছি, এরকম অনুভুতি কখনো হয়নি।তোমাকে আমি বোঝাতে পারবো না,কিন্তু ওই ঘরে আমি একা শোবো না। তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না,কিন্তু আমি একা ওই চেয়ার টা তে বসে থাকি প্লিজ। বললাম, ধুর তাই হয় নাকি? তুমি বসে থাকবে আর আমি ঘুমাবো? তারচেয়ে তুমি বিছানায় শুয়ে পড়ো, আমি বালিশ নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ছি।

পারমিতা বললো না তাও হয় না। তোমার আপত্তি না থাকলে আমরা দুজনেই একই বিছানায় কষ্ট করে কাটিয়ে দিতে পারি। আমি বললাম, সেটা ভালো দেখাবে কি? আচ্ছা তুমি এঘরে ঘুমাও, আমি তোমার ঘরে ঘুমাই, এতে আপত্তি নেই তো? পারমিতা একটু দুঃখ পেলো যেন মনে মনে, কিন্তু মুখে একটা স্বস্তির ভাবও লক্ষ্য করলাম। বললাম, চলো তোমার ঘরটা দেখে আসি, আর তোমার ব্যাগ ও নিয়ে আসি। দুজনে এসে ঢুকলাম পারমিতার ঘরে। ঘরটা অন্য ঘরগুলোর মতোই, কোনো তফাৎ নেই। তবু কেন যে পারমিতার অস্বস্তি হচ্ছে কে জানে? তবে মেয়েদের আমি খুব ভালো চিনি, ওদের ষষ্ট ইন্দ্রিয় ভীষন জাগ্রত হয়।

Comments

Scroll To Top