Paromitar Koyekdin – Part 1

tomal majumder 2017-06-20 Comments

ছেলেরা যা বুঝতেই পারে না, ওরা না দেখেও অনুভুতিতে সেটা বুঝে যায়। কথাটার প্রমান আরো একবার পেলাম পারমিতার ঘরের বাথরুমে ঢুকে। ভালো করে চারিদিকে নজর করতেই চোখে পড়লো ছোট্ট জিনিসটা। শাওয়ারের পিছনে ছাদের কাছাকাছি বসানো রয়েছে জিনিসটা। একটা ক্যামেরা.. গিজারের লাইনের পাশে এমন ভাবে লাগানো যে খুব নজর করে না দেখকে ধরাই যায়না। বেরিয়ে এলাম বাথরুম থেকে। দরজার কাছে এসে ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে পারমিতা কে ইঙ্গিত করলাম কিছু না বলতে। পারমিতা চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার? আমিও চোখ মটকে জানালাম, বলছি দাঁড়াও।

যেন কিছুই দেখছি না, এভাবে চারদিকে তাকিয়ে বিছানার পায়ের দিকে আরো একটা লুকানো ক্যামেরা দেখতে পেলাম। স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে পারমিতার কাছে গিয়ে ওর পাশে বসলাম।তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে প্রেম করার ভঙ্গী তে বললাম, আমার কথা শুনে চমকে উঠোনা যেন,স্বাভাবিক থাকো, তুমি ঠিক বলেছিলে, বাথরুমে আর এখানে দুজায়গাতেই লুকানো ক্যামেরা আছে। পারমিতা ভিতরে ভিতরে চমকে গেলেও বাইরে প্রকাশ পেতে দিলো না।

বরং প্রেমিকার মতো ন্যাকামি করে বললো, যাহ্! দুষ্টু! কি বলছো তুমি?? আমিও ন্যাকামি করে বললাম, ঠিক ই বলছি সোনা। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে সুইচবোর্ড এর কাছে গিয়ে গলা তুলে বললাম, অনেক রাত হলো, এবার ঘুমিয়ে পড়ো পারমিতা, আমি আলো নিভিয়ে দিচ্ছি। বলেই ঘরের আলো নিভিয়ে দিলাম। পারমিতা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, আমি এক লাফে তার কাছে পৌঁছে মুখে হাত চাপা দিলাম। তারপর অন্ধকারেই তার হাত ধরে ব্যাগটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।

দুজনে এরপর যোগেন এর দরজায় নক করলাম। অনেক ডাকাডাকিতেও যোগেন সাড়া দিলো না। হয়তো ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে কাঁদা। আমার ঘরে চলে এলাম দুজনে। ঘরে ঢুকেই আমার বাথরুম আর বেডরুম তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। কোথাও ক্যামেরা দেখতে পেলাম না। এর মানে ইচ্ছে করেই মেয়েদের সেই সব ঘরগুলো দেওয়া হয়েছে,যে ঘরে ক্যামেরা লাগানো আছে। নিঃসন্দেহ হয়ে তারপর দুজনে কথা বলতে শুরু করলাম।

কিংশুক, চলো ফিরে যাই আমরা। পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে এখন সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। আমি বললাম, এতো ঘাবড়ে যাচ্ছো কেন? হয়তো ক্যামেরার কথা অরগানাইজার রা জানেই না। হোটেলওয়ালাদের বদমাইশি। দেখাই যাক না কি হয়। আমি তো আছি, তোমাকে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে বিপদে পড়তে দেবো না। ভরসা রাখো আমার উপর।

অদ্ভুত দৃষ্টি তে তাকালো আমার দিকে পারমিতা।জিজ্ঞেস করলাম কি দেখছো? বললো,তুমি সত্যিই আমাকে একা ছেড়ে দেবে না তো কিংশুক? আমি বললাম, দেবো না, কথা দিলাম পারমিতা। আমার হাতের উপর একটা হাত রেখে আস্তে করে বললো, থ্যাংকস তমাল, অনেক ধন্যবাদ। বাই দ্যা ওয়ে, আমার ডাক নাম শ্রী, বন্ধুরা আমাকে শ্রী বলে ডাকে,কেমন? আমি হেসে বললাম, ওকে শ্রী, এবার যদি এই বিশ্রী বন্ধুটার পাশে ঘুমাতে ভয় না পাও, তবে শুয়ে পড়ো,বড্ড ঘুম পাচ্ছে। দুজনে আলো নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সিঙ্গেল বেড, দুজনে খুব কষ্ট করে শুয়ে আছি।ঘুম আসছে না কিছুতেই।কিন্তু পারমিতা নিশ্চিন্তে শিশুর মতো ঘুমাচ্ছে এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে। বাথরুম যাবো বলে ওর হাতটা সরাতে গেলাম, আরো বেশী করে আঁকড়ে ধরলো আমাকে।ভীষন মায়া হলো মেয়েটার জন্য। আমি আলতো করে ওর কপালে একটা চুঁমু খেয়ে শুয়ে পড়লাম ওকে জড়িয়ে।

সকালে ঘুম ভেঙে চোখ খুলতেই দেখি পারমিতা আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে,আর আমি ওর কোমরের উপর একটা পা তুলে দিয়ে কোলবালিশের মতো জড়িয়ে শুয়ে আছি। আমাকে চোখ মেলতে দেখে বললো, গুডমর্নিং তমাল! তোমার ঘরে ক্যামেরা থাকলে এতোক্ষনে একটা ওয়ান এক্স ক্যাটাগরির পর্ণ পেয়ে গেছে ওরা। বলেই হো হো করে হাসতে শুরু করলো। আমি ভীষন লজ্জা পেয়ে ধড়মড় করে উঠে বসলাম। বললাম, সরি শ্রী, ঘুমালে আমার হুশ থাকে না, খুব খারাপ কিছু করে ফেলেছি কি?শ্রী বললো, হুম্মম্,বেশ খারাপ ই,তবে নেভার মাইন্ড, আই রিয়েলি এনজয়েড ইট!!…

বলেই আবার সেই কান গরম করা হাসিতে ফেটে পড়লো। একটু ধাতস্ত হয়ে বললো, বিছানায় সব সময় তাহলে একা থাকো না বলো? মাঝে মাঝে সঙ্গিনী ও থাকে?? বেশ অভিজ্ঞতা আছে মনে হলো। উফ্ নিজেকে সামলাতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। কন্ট্রোল করতে না পারলে ওরা টু এক্স ক্যাটাগরি পেয়ে যেতো। বুঝলাম ন্যাকা ন্যাকা গড়পড়তা বাঙালী মেয়ে নয় পারমিতা, বোল্ড অ্যান্ড বিউটিফুল! আমি ও এবার মজা করে বললাম, থ্রী এক্স হতো না বলছো??… এবার লজ্জা পেলো শ্রী… ধ্যাৎ, অসভ্য কোথাকার!.. বলেই উঠে বাথরুমে চলে গেলো।

ঠিক সকাল ৮-৩০ এ গাড়ী এসে গেলো। সবাই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে উঠে পড়লাম গাড়ীতে। এবার মেয়েরা সবাই এক গাড়ী তে উঠলো। পারমিতার ইচ্ছা ছিলো না অন্য গাড়ীতে যাবার, কিন্তু কিছু করার নেই, সংস্থার যা নিয়ম, মানতেই হবে। আমার গাড়ীতে যোগেন সহ আরো ৪ জন উঠলো। তাদের ভিতর ২জন অন্ধ্রপ্রদেশ আর ২জন আসাম এর। এই ক্যাম্পে স্থানীয় কাউকে মানে মধ্যপ্রদেশ এর কাউকে নেওয়া হয়নি। সবাই নিজের নিজের স্টেট এর মেম্বারদের সাথেই কথা বলতে ব্যস্ত, অন্যদের সাথে আলাপ করার কোনো ইচ্ছা বা তাগিদ লক্ষ্য করলাম না।

আমি দু এক বার চেষ্টা করে সদিচ্ছার অভাব দেখে ক্ষান্ত হলাম। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে জায়গাটার শোভা উপভোগ করার আর ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। বেশীর ভাগ জায়গাই পাথুরে এবং জঙ্গলে ঘেরা। রাস্তা ও যে খুব একটা ভালো বলা যায় না। মাঝে মাঝে বেশ গা ছমছম করা গহীন জঙ্গল চোখে পড়লো। সবার আলাপ আলোচনা থেকে যেটা বোঝা গেলো, কেউই এই অঞ্চলেই ধারে কাছেও আসেনি আগে।

ঘন্টাখানেকের ভিতর ক্যাম্প সাইটে পৌঁছে গেলাম। পাঁচমারি থেকে কিলোমিটার ৬ এক আগে একটা নির্জন বনভুমি দেখে ক্যাম্প করা হয়েছে। ক্যাম্প একটু জনবিরল জায়গাতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আর জায়গাটা ও অসম্ভব সুন্দর। ছোট্ট একটা টিলার মতো জায়গা। গা ঘেঁষে কুলুকুলু শব্দে নেমে চলেছে একটা ঝরনা। ভরা বর্ষায় এই ঝরনা যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করে, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়, কিন্তু আপাতত খুবই শান্ত এবং রোমান্টিক মুডে ঝরে পড়ছে।

গাড়ী থেকে নেমে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো তাবু খাটাতে।যে যে যেভাবে গাড়ী তে এসেছে তাদের টিম গুলো ও সেভাবেই করা হলো। মোট ৫ টা তাবু খাটানো হলো। আমার গাড়ী তে যে ৬ জন ছিলাম, তাদের একটা তাবু। মেয়েদের ৫ জনের ১টা তাবু আর বাকী ৪জনের ১টা তাবু। বাকী দুটো তাবুতে অরগানাইজারদের কর্তা ব্যক্তি ৪ জন এবং অন্যটায় খাবার দাবার সহ পোর্টার রা ৬ জন। প্রত্যের টিম থেকে একজন কে টিম ক্যাপ্টেন করা হলো। আর ক্যাম্প কমান্ডার ১জন, তার নাম এন.রঘুনাথন। আমাদের টিমের ক্যাপ্টেন করা হলো যোগেন কে।

Comments

Scroll To Top